বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

চট্টগ্রাম ওমজ টেক ফেসট ২০১৪

রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম অনলাইনে। মনে সংশয় ছিল । কাউকে চিনি না। তারপর ও দুরুদুরু বুকে ২৩শে মে  সকালে হাজির হই চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে । ৮.৩০ টায়  পৌঁছে ও দেখি আমি লেট । চারদিকে ভলান্টিয়ার দের ছুটোছুটি ।টেবিলে নিজের নাম বলেই  ব্রেকফাস্টের প্যাকেট নিয়ে ঢুকে পরি  লিফটে ।উপরে যেয়ে দেখি এলাহি কারবার ।সব অচেনা মুখে হলরুম  প্রায় ভর্তি । সংশয় কেটে গেল  যখন  দেখি ভলান্টিয়ার রা  হাসি মুখে   নিজের করে নিলেন । একটু ফিরে যাই  পিছনের গল্পে  ।  মজিলা বাংলাদেশ , চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামের ফায়ারফক্স ক্লাবসমূহের সহযোগিতায় ২৩ মার্চ, ২০১৪ শুক্রবার চট্টগ্রাম ওমজ টেক ফেসটের আয়োজন করে । উক্ত টেক ফেস্টে চট্টগ্রামের প্রায় ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নারী শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেন। উল্লেখ্য, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রনী ভূমিকা প্রসারের জন্য ও তাদের অংশগ্রহন বাড়ানোর জন্য এটি ছিল মজিলা বাংলাদেশের প্রথম পদক্ষেপ । এতে নারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রক্টর রশীদ আহমেদ চৌধুরী , আর্ন্তজাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক মোঃ আরিফ হাসনাইন ও মোঃ মাহমুদুর রহমান , পোর্টসিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নয়ন দেবনাথ , ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি (ইউ এস টি সি) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক সানজিদা শারমিন ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক সামিউল আলম , চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক প্রিয়ম বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন । উৎসবে যোগদান করার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ছাড়া হয় এপ্রিল , ২০১৪ তে এবং রেজিস্ট্রেশনের শেষ দিন ধার্য করা হয় ২০ মে , ২০১৪ । এই সময়কালের মধ্যে ২৬০ টির অধিক রেজিস্ট্রেশন জমা পরে কিন্তু সীমিত আসন সংখার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেয়া সম্ভব হয় নি । অতঃপর পূর্বে রেজিস্ট্রেশনকারআই শিক্ষার্থীদের বাছাইকরণ ও তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া ২ টি ধাপে শুরু হয় ১৫ মে, ২০১৪ থেকে । প্রথম ধাপে তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হয় । দ্বিতীয় ধাপে তাদেরকে নিশ্চিতকরণ মেইলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সহ দেয়া হয় । মজিলা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করনের পুরো প্রক্রিয়াটি সুমি খাতুন , নাইমা সুলতানা ও রহিমা সিদ্দিকা পরিচালনা করেন । অনুষ্ঠানের দিন সকালবেলা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে অংশগ্রহণকারীরা সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে রিপোর্ট করা শুরু করেন । এসময় তাদের রেজিস্ট্রেশন কনফারমেশন , সকালের নাস্তা ও প্রয়োজনীয় রুম নাম্বার জানিয়ে দেয়া হয় যা সাড়ে নয়টা থেকে পৌনে দশটা পর্যন্ত চলে । এরপরে ঠিক ১০ টায় মূল পর্ব শুরু হয়ে যায় । শুরুতে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রক্টর রশীদ আহমেদ চৌধুরী, অতঃপর অংশগ্রহনকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক প্রতিনিধিরা তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। অতঃপর কী নোট স্পিচ প্রদান করেন মজিলা বাংলাদেশের কমিউনিটি লীড মাহে আলম খান, তিনি তার বক্তব্যে ওপেন সোর্স, মজিলা, মজিলা বাংলাদেশ কমিউনিটি , মজিলা মিশন ও মজিলার বিভিন্ন পাথওয়ে তুলে ধরেন। কী নোট সেশনের পর ছিল ডেমো বুথ ও ফটো বুথ। ডেমো বুথে মজিলার ফায়ারফক্স ওএস চালিত মোবাইল ফোন প্রদর্শিত হয় , ফটোবুথে ছিল মজিলার আরেকটি প্রযুক্তি ওয়েব আরটিসি ব্যবহার করে কিভাবে তাৎক্ষণিক ছবি তোলা যায় তার প্রদর্শন। উভয় বুথ দুইটি যথেষ্ট সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। অতঃপর নামাজ ও দুপুরের খাবারের পর দুপুর ২ টা থেকে দুটি টেকনিক্যাল সেশন শুরু হয় সমান্তরালে। মজিলার ওয়েব মেকার বিষয়ক সেশনে ৭০ জন এর অধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এই সেশনে মেনটরের দায়িত্ব পালন করেন মাহে আলম খান এবং অংশ গ্রহণকারীদেরকে মাঠ পর্যায়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন ইমতিয়ায নূর পিয়াল , আনন্দ দাস , একরামুল হক ইয়াসিন , সামসুজ্জামান সাদি , মালিহা মমতায ইসলাম । ওয়েব মেকার সেশনে শিক্ষার্থীদের ওয়েবের বিভিন্ন প্রাথমিক বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয় , ওয়েবমেকার টুল ব্যবহারের মাধ্যমে । অন্য সেশনটি ছিল ফায়ারফক্স ওএস অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং এর উপরে । এই সেশনে মজিলার ফায়ারফক্স ওএস অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, কিভাবে অ্যাপ তৈরী করা যায়, কি কি লাগে , ফায়ারফক্স ওএস মার্কেট প্লেস ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা দেওয়া হয়। এই সেশনে মেনটরের দায়িত্ব পালন করেন রাহিদ হাসান এবং অংশগ্রহণকারীদেরকে মাঠ পর্যায়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন নাফিউল পান্থ , পরাগ দাস , তৌফিক আনাম রাইন । টেকনিক্যাল সেশন গুলো শেষ হলে এতে অংশ গ্রহণকারীদেরকে মজিলা ফাউনডেশনের পক্ষ থেকে রমকারি স্টিকার , ব্যাজ , লেনিয়ার্ড , টি-শার্ট , রিষ্টব্যান্ড ইত্যাদি গিফট হিসেবে দেয়া হয় । পুরো অনুষ্ঠানের সার্বিক সহায়তায় এবং অংশগ্রহণে  চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ , আর্ন্তজাতিক  ইসলামিক  বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের মজিলিয়ান ও ফায়ারফক্স ক্লাবের সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উক্ত প্রযুক্তি উৎসবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।
 একজন  অংশগ্রহণকারী  তাসনিম উচ্ছসিত  কণ্ঠে  আয়োজনের   অকুণ্ঠ  প্রশংসা  করলেন  এবং ভবিষ্যতে এই  আয়োজন আর ও  ধারাবাহিক হবে বলে আশা  প্রকাশ  করেন।   অংশগ্রহণকারী নারীরা টেকনিক্যাল সেশন  থেকে  যা শিখেছেন  তা  আইটি সেক্টরে তাদের  ভবিষ্যত  অংশগ্রহনে অনুপ্রেরণা  যোগাবে ।  গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার  বিকল্প নেই ।এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত অংশগ্রহণ ।  বাঙালি নারীদের জন্য  বিশ্বমঞ্চের দুয়ার  উন্মক্ত করনে মজিলার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় । প্রশংসার দাবীদার  অক্লান্ত পরিশ্রমে  যারা এই  আয়োজন সফল করেছেন । সময়ের  পরিক্রমায়  মজিলা বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে মুক্ত জ্ঞানচর্চায়  বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন